রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে আজ সোমবার সকালে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে এ সফরে থাকার কথা ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের।
তবে শারীরিক অসুস্থার কারণে শেষ পর্যন্ত এ সফর বাতিল করতে হয়েছে তাকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শারীরিক অসুস্থার কারণে ভারত সফরে যেতে পারেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী দেশের সরকার প্রধান যখন কোনো রাষ্ট্রীয় সফরে যান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্যই তার সফরসঙ্গী হন।
এর আগে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সঙ্গী হচ্ছেন।
সরকারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে নানা ধরনের মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। আর সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা নিয়ে বিতর্ক আরও খারাপের দিকে গেছে। তাই তাকে এ সফর থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’
তবে এ তথ্য মানতে নারাজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ জনেরা। তাদের মতে- ড. এ কে আবদুল মোমেন শারীরিক অসুস্থতার ফলে সফরে যাননি।
এর আগে, এদিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, রেলপথমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৭১ জন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন রোববার (৪ সেপ্টম্বর) বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, কোয়াড, সংখ্যালঘু নির্যাতন, পানি ভাগাভাগি, সীমান্ত সুরক্ষা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। একইসঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পরিবর্তিত ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপট, চীন-তাইওয়ান-যুক্তরাষ্ট্র প্রসঙ্গও আলোচনায় স্থান পেতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় নিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি
সফরেরর প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কথা রয়েছে। পরে তিনি দিল্লিতে নিজামুদ্দিন আউলিয়া দরগাহ পরিদর্শন করবেন। এ দিনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি এবং আদানি গ্রুপ চেয়ারম্যান গৌতম আদানি।
সফরের দ্বিতীয় দিন ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘হায়দরাবাদ হাউস’-এ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং একান্ত বৈঠক করবেন। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরে দুই প্রধানমন্ত্রী একটি যৌথ প্রেস বিবৃতি দেবেন।
ওই দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখাড়ের সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
৭ সেপ্টেম্বর দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের উত্তরসূরীদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদানের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
সফর শেষে ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরবেন শেখ হাসিনা।